মসজিদের শহর বাগেরহাট

বাংলাদেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের রক্ষক হিসেবে বাগেরহাট আজ ও প্রথম সারিতে স্থান দখল করে আছে | সৌন্দর্যে ভরপুর এই জেলাটি বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত খুলনা বিভাগের অন্তগত একটি জেলা | খুলনা জেলা থেকে দূরত্ব প্রায় ১৫ মাইল| বাংলাদেশের মসজিদ এ সমৃদ্ধ জেলাগুলোর মধ্যে বাগেরহাট অন্যতম ,এজন্য জেলাটি মসজিদের শহর নামেও বেশ পরিচিত | ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট কে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা করে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো |কেন না ইউনেস্কো সে সময় বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে বাগেরহাটএর ১৭তটি স্থাপনা কে তালিকাভুক্ত করে, যার মধ্যে ১০টি ছিল মসজিদ |

বাগেরহাটের কথা চিন্তা করলেই আমাদের সর্ব প্রথম মনে পড়ে ষাট গম্বুজ মসজিদ এর কথা | কিন্তু বাগেরহাট কি শুধু ষাট গম্বুজেই সীমাবদ্ধ ..? মোটেও তা নয় | ঐতিহাসিক নিদর্শনে মোড়ানো শহরটিতে ষাট গম্বুজ ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন অনেক মসজিদ, যেগুলো কালের বিবর্তনে সাক্ষী হিসেবে আজও বাগেরহাট কে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেয় | শহরটির পরিকল্পনায় ইসলামী স্থাপত্যে রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, বিশেষত মসজিদের কারুকার্যে মুঘল এবং তুর্কি স্থাপত্যেরীতিতে প্রভাব বেশ কক্ষে পড়ে |

এই শহরে প্রায় ৩০০টিরও বেশি মসজিদ আছে, যাদের অধিকাংশ নকশা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এবং স্বতন্ত |

বাগেহাটের বেশ কয়েকটি মসজিদ সম্পর্কে তুলে ধরছি:

ষাটগম্বুজ মসজিদ :

ষাটগম্বুজ মসজিদটি মূলত মুসলিম বাংলার স্বর্ণযুগ এর প্রতিনিধিত্ত্ব করে | ধারণা করা হয়, ১৪৪০ সালে খান জাহান আলী মসজিদটি স্থাপনা করেন | মসজিদ এর দেয়াল গুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু |ষাট গম্বুজ মসজিদ এর গম্বুজ এর সংখ্যা মোট ৮১ টি | তবে লোকমুখে ষাট গম্বুজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মসজিদটি | মসজিদটি তৈরী করার জন্য পাথর াণ হয়েছিল রাজমহল থেকে | বহু অর্থ বেয়ে নির্মাণ করা হয় এটি | নির্মাণে তুঘলকি ও জৈনপুরী নির্মাণশৈলীর বেশ সুস্পষ্টতা লক্ষ করা যায় |

চুনাখোলা মসজিদ :

বাগেরহাটের চুনাখোলা গ্রামে ধানক্ষেতের মাঝে চুনাখোলা মসজিদ অবস্থিত | ১৫ শতাব্দীতে নির্মিতও এই মসজিদ মূলত ৭.৭ মিটার চৌকোনা দালান যার দেয়ালগুলো ২.২৪ মিটার পুরো | মসজিদের পূর্বদিকে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটিকরে প্রবেশদ্বার রয়েছে |

নয় গম্বুজ মসজিদ :


বাগেরহাটে বেশ পরিচিত ঠাকুর দীঘির পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই মসজিদটি | মসজিদটির পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৩টি করে প্রবেশদ্বার ও পশ্চিম দেয়ালে পোড়া-মাটির ও লতাপাতার অলংকৃত তিনটি মেহেরাব রয়েছে| মসজিদের ভেতরে একটি পিলার এ গর্ত রয়েছে | লোকমুখে শুনাযায় এক পীর আংগুল এর খোঁচায় ওই গর্ত করেছিলেন |

ছয় গম্বুজ মসজিদ :

মসজিদটি রেজা মসজিদ নামেও বেশ পরিচিত | ১৫ শতাব্দীর নির্মাণকৃত স্থাপনাটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় একটি নতুন দালান তৈরী হয় | তবে এখনো প্রাঙ্গনে কিছু ধংশাবশেষ কক্ষে পড়ে |

সিংরাই মসজিদ :

এক গম্বুজ বিশিষ্ট সিংরাই মসজিদ টি ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় তিনশ গজ দক্ষিণ -পূর্ব দিকে অবস্তিত | খান জাহান আলীর নিজস্ব স্থস্পত্যশৈলী অনুযায়ী গম্বুজটি পুরু দেয়ালের উপর দন্ডায়মান | এর নির্মাণশলীর সাথে ষাট গম্বুজের কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

রণবিজয়পুর মসজিদ :

এই মসজিদটির অভ্যন্তরভাগ খুবই সাধারণ হলেও মসজিদটিতে দেখা মেলে বাংলাদেশের বৃহত্তম গম্বুজ | এটি খুলনা বাগেরহাট সড়কে খান জাহান জাদুঘরের বিপরীত পাশে অবস্থিত | এই মসজিদ খান জাহানের স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করা হয়েছে |

জিন্দা পীরের মসজিদ :

এই মসজিদটি জিন্দাপীরের মাজার কম্পেক্স এর উত্তর পশ্চিম কোনায় অবস্থিত | মাজারে গায়ে এখনো কিছু পোড়ামাটির চিত্রফলক আছে | ধারণা করা হয় , এটি হোসেন শাহ বা তার পুত্র নুসরাত শাহ এর আমলে নির্মিত হয়েছিল|

বিবি বেগনী মসজিদ :


বিবি বেগনী মসজিদ ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার পশ্চিম এ অবস্থিত | বিবি বেগনী মসজিদটি পুরোপুরি ইটের তৈরী | ধারণা করা হয় , মসজিদটি বিবি বেগনী কর্তৃক একজন নারী কর্তৃক নির্মিত , যিনি ছিলেন খান জাহানের পত্নীদের একজন |

Looking for a First-Class Business Plan Consultant?

Spread the love